সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ আপনি যদি মনে করেন-বয়সে ছোটদের থেকে কিছু শেখা উচিত না / বয়সে ছোটদের উচিত না উপদেশ দেয়া বা জীবনের অভিজ্ঞতা / নিজস্ব মনমানসিকতা বা ‘দর্শন’ (!) শেয়ার করা, তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য না।

একইভাবে- (আপনি আমি কেউই ভুল/দোষ মুক্ত নই) আপনি যদি এমন হন যে- আপনার মধ্যে থাকা ভুল/দোষ নিয়ে কোথাও আলোচনা হলে নিজের সংশোধনের চেয়ে আলোচকের অপ্রাসঙ্গিক কোনো দোষ বের করে তাকেই খারাপ প্রমাণিত করতে আপনি বেশি আগ্রহী, এক্ষেত্রেও এই লেখাটি আপনার জন্য না।

আপনার মূল্যবান সময় এখানে ‘নষ্ট’ না করার অনুরোধ থাকবে। আল্লাহ আপনার হায়াতে বরকত দিন। আমীন।


এস্তেখারা

কেউ যখন কোনো পাত্র/পাত্রীর সন্ধান দেয় এবং এস্তেখারা করে ‘ভালো না পেলে’ / ‘কল্যাণকর মনে না হলে / দিল না ঝুঁকলে’ এবং শেষমেষ বিয়েটা না হলে অপরপক্ষ+সন্ধানদাতা অপমানবোধ করে, ‘মাইন্ড’ করে, আরো না জানি কী কী করে।

‘কী, এত বড় সাহস! আমার মত মহান+নেককার ব্যক্তির মেয়ে/ছেলেকে এস্তেখারায় খারাপ পায় / ভাল পায় না’

অবশ্য এটা তো অস্বাভাবিকও না। (এস্তেখারার বাস্তবতা না বোঝার কারণে / দ্বীনের বুঝ কম থাকার কারণে বা অহংকার থাকার কারণে। এই যে সম্ভাব্য ৩টি কারণ লিখলাম, আল্লাহই জানেন এটা পড়েও কে কে রাগ করবে!)

কথা হচ্ছে- কাউকে এস্তেখারায় “খারাপ পাওয়া / ভালো না পাওয়া / দিল না ঝোঁকা” মানে পাত্র/পাত্রী ব্যক্তি হিসেবে খারাপ- তা না। সর্বোচ্চ এতটুকুই যে- এই বিয়েটা ওদের উভয়ের জন্য হয়ত ভালো হতো না।

অবশ্য “এস্তেখারা করে ভাল পায়নি” না বলে অন্য কী বলা যায়, সেটাও চিন্তার বিষয়।

ঘটক

সমস্যাঃ এই জিনিসটা আল্লাহই জানেন কতবার ঘটতে দেখলাম। ঘটনা এরকম-

জনাব ক জনাব খ-র কাছে পাত্র/পাত্রী/চাকরির সন্ধান চেয়েছে। ‘খ’ সাহেব একটা সন্ধান দিয়েছে, মোবাইল নম্বর দিয়েছে। বা একবার হয়ত বাড়িতেও নিয়ে গেছে।

এরপর যে কোনো কারণে যখন বিয়ে হবে না (বা চাকরিতে জয়েন করবে না) – এবং জনাব খ তা জানতে পারবে- তিনি প্রচণ্ড রাগ/বিরক্ত/হতাশ ইত্যাদি হন।

এবং তার রাগ/বিরক্তি আরো বাড়ে, যখন তার কাছে ২য়বার কোনো পাত্র/পাত্রীর সন্ধান চাওয়া হয়।

সম্ভাব্য সমাধানঃ

১। জনাব ক যখন সন্ধান চাইলেন তখনই এটা বলে দেয়া যে-

‘আসসালামু আলাইকুম জনাব খ, আপনার কাছে অমুক বিষয়ের সন্ধান চাই। যদি আপনার দেয়া সন্ধান আমি গ্রহণ করি/পছন্দ করি/বেছে নিই- তাহলে তো অবশ্যই আপনার উপকারের জন্য আমি কৃতজ্ঞ। আর যদি যে কোনো কারণে তা গ্রহণ না করতে পারি/পছন্দ না হয় তবুও আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ, কারণ আপনি আপনার চেষ্টা করেছিলেন। আশা করি এ কারণে কোনো মনমালিন্য হবে না। আমাদের সম্পর্ক এত হালকা/ঠুনকো না যে- এসব কারণেই তা ভেঙ্গে যাবে বা খারাপ হবে।”

তবে হ্যাঁ, কমিউনিকেশন গ্যাপ থাকাও কাম্য না। প্রথম ক্ষেত্রে কী হয়েছিলো- তা না জানানো, না জানিয়েই আবার আরেকটার সন্ধান চাওয়া, এটাও উচিত নয়। আপডেট জানানো উচিত- “হ্যাঁ, আমি খোঁজ নিয়েছিলাম/গিয়েছিলাম। অমুক কারণে হয়নি। ঐ অমুক কারণ ছাড়া আরো কোনো সন্ধান থাকলে চাইলে জানাতে পারেন, জানালে উপকৃত হবো।”

২। জনাব খ (বা আপনার কাছে) যখন সাহায্য চাওয়া হবে- তখন সাহায্য করার আগেই আপনি ধরে রাখবেন যে- আপনার পরামর্শ সে নিতে বাধ্য না, আপনি তাকে জোর করতে পারেন না। আপনি খাবার পরিবেশন করেছেন, মেহমান তার রুচিমত খাবে।

কেন বেশি খেয়েছে বা কেন কম খেয়েছে/খায়নি, তা নিয়ে অবশ্যই মেহমানের সাথে তর্ক/মনমালিন্য কাম্য না।

কমিউনিকেশন গ্যাপ

আচ্ছা, নিচের লাইন পড়ার আগে, একটা প্রশ্নের উত্তর দিন।

মনে করুন কেউ আপনার বায়োডাটা সংগ্রহ করেছিলো / পড়েছিলো – তারপর ছবি চেয়ে ইমেইল করেছিলো। ছবিও রিপ্লাই দিয়ে দেয়া হয়েছে, তারপর কতদিন কোনো যোগাযোগ না হলে ধরে নিতে হবে যে- অপরপক্ষ আগ্রহী না?

আমার ঘটনা বলি। প্রসিদ্ধ এক ‘ইসলামী’ ম্যাট্রিমনি সাইট থেকে জীবনে প্রথমবার বায়োডাটা সংগ্রহ করেছি, আমার বায়োডাটার লিংক (এবং অভিভাবকের মোবাইল নম্বর) পাত্রীপক্ষের অভিভাবককে দেখতে/বিবেচনা করতে বলেছি, আধা ঘণ্টার মধ্যে রিপ্লাই দিয়ে ছবি চেয়েছে। (তারমানে ইমেইল নিয়মিত চেক করে, ইমেইল বোঝে না / চেক করে না- এমন না)।

তারপর ১০ দিন হয়ে গেছে- কোনো রিপ্লাই / কল কিছুই নেই!

আমি বিশাল এক ইমেইল করে অনুরোধ করেছি- ভবিষ্যতে কারো সাথে যেন এমন না করে (আপডেট না জানানো)। সাথে আমার ব্যক্তিগত-ধার্মিক-পারিবারিক গুণ- আল্লাহ যাই দিয়েছেন- তার অনেকগুলো উল্লেখ করে শেষে লিখেছি- (ভাবার্থ)- অনেক গোপন ও ব্যক্তিগত কিছু বলে দিয়েছি। এই বিয়ে আমার পক্ষে আর সম্ভব না। (কারণ ঐগুলো না জেনেও যদি রাজী হতো- সেটাই নিঃস্বার্থ ব্যাপার হতো। )

আরে বাবা, আমি এমন কেউ না যে- আমাকে পছন্দ করতেই হবে। আমার প্রস্তাব গ্রহণ করা কোনো ফরজ/ওয়াজিব এমন কিছু না। যে কোনো কারণে পছন্দ না হলে জানিয়ে দিলেই তো হয়। কারণ সহ বলতে হবে, এমনও না।

‘বায়োডাটায় দেখলাম আপনার আয় (আপেক্ষিকভাবে) ‘কম’ / আল্লাহ আপনার মুখে চাপদাড়ি দেয়নি’ বা অমুক কারণে পছন্দ হয়নি- তা বলা তো ফরয না।

শুধু এতটুকু বললেই হয়- ‘মাশা-আল্লাহ বেশ ভাল বায়োডাটা। তবে আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে / পারিবারিক সিদ্ধান্তক্রমে / অন্য কোনো কারণে আগ্রহী না। আশা করি উনি অবশ্যই আরো ভাল কাউকে পাবেন। জাযাকাল্লাহ’।

দুটি ভাল উদাহরণ

আমি একবার একজনের জন্য একটি বায়োডাটায় ইমেইল করেছিলাম, ফেব্রুয়ারীর ২২ তারিখে রিপ্লাই দিয়েছে-

আসসালামু আ’লাইকুম। আপনাদের বায়োডাটা ভালো লেগেছিল তবে কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে পরিবার আগাবে না

মেইল করার ৫ম দিনে বলে দিয়েছে, কত সুন্দর।

আমার বায়োডাটা একজন সংগ্রহ করেছিলো। আমি ‘প্রত্যাশীত জীবনসঙ্গীর বর্ণনা’য় সর্বনিম্ন যা যা লিখেছিলাম- সেগুলোর সাথে কোনোরকম মিলেছে- পুরোপুরিও মেলেনি, তবে চেষ্টা করেছিলো আরকি। আমি পরবর্তীতে বায়োডাটা এডিট করে কিছু পরিবর্তন করে দিয়েছি- যাতে ঐরকম কারো আর টাকা+সময়+আশা নষ্ট না হয়।

সে কয়েক ঘন্টার মধ্যেই রিপ্লাই পেয়েছে-

আশা করি আপনি উত্তম কাউকে পেয়ে যাবেন। 

***

(নিচের অংশটুকু না পড়লেও চলবে)

আমি জানি- কোনো সম্মানিত ভাই হয়ত বলবেন- আপনার পক্ষও তো পারতো কল দিতে / কী সিদ্ধান্ত নিলো জানতে চাইতে। (১০ দিন পর ‘না’ করে দেয়ার চেয়ে, অবশ্য তারা যেহেতু কিছু জানায়নি, সুতরাং ধরে নেয়া যায় যে আগ্রহী ছিলো না)।

হ্যাঁ, অভিভাবককে দিয়ে কল দেয়ানো যেতো, কল দিয়ে সিদ্ধান্ত জানতে চাইলে অবশ্যই কিছু না কিছু তো বলতো।

কিন্তু এই দেরী করাটা অনেক ক্ষেত্রেই হয় ‘আরো ভালো কেউ আসে কিনা / সন্ধান পাই কিনা’ এই অপেক্ষা থেকে। এই অপেক্ষার চোটেই তো আজ বেচারা ‘জ্বীনদের’ দুর্নাম হয়, বিয়ে নাকি আটকে রেখেছে। (একদমই যে কিছু ঘটে না, তা বলছি না। শুধু বলছি- জ্বীনদের ঘাড়ে দোষ একটু বেশিই যায়।)

আরো ভালোর অপেক্ষা করলে করুক, কিন্তু সেক্ষেত্রে প্রশ্ন করে জেনে নিক- ‘আগামী অমুক মাস/পরীক্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত দেরী করা যায়?’

আমার যোগাযোগকৃত সেই পাত্রীর বায়োডাটা অবশ্য পরে হাইড করা দেখেছিলাম, অর্থাৎ নতুন কেউ যোগাযোগ করতে পারবে না। এটা হয়ত একারণেই যে- তারা সিরিয়াস, একখানে কথা চলাকালীন আরেকজনের প্রস্তাব পেতে আগ্রহী না, খুব ভালো ব্যাপার।

কিন্তু বায়োডাটা-হাইড করা হয় আরেক কারণে। কেউ হয়ত ভাবে- ‘অনলাইনে এইসব সাইট থেকে কি আর পাত্র/পাত্রী পাবো?’

এরকম সন্দেহ/অনিশ্চয়তা নিয়ে বায়োডাটা সাবমিট করে। তারপর যখন বাস্তবেও কেউ এসে যায়, তখন নিজেরাই চমকে যায়। বুঝে উঠতে পারে না, কী করবে।

***

আরেকটা জিনিস ঘটে। ‘আমার ছেলে/মেয়ের চাহিদা কম না’ এমনটা বুঝ দেয়ার চেষ্টা।

হয়ত এক-দেড় বছর খুঁজে কাউকে পায়নি, পরিবারের বয়স্ক কারো / অভিভাবকদের হয়ত টেনশনেই অসুস্থ/মারা যাওয়ার উপক্রম। কিন্তু যখন কেউ প্রস্তাব দেয়- তখন এমন ভাব ধরা হয় যে-

ফকিরের বাচ্চার সাহস কত! প্রতিদিন কয়েকটা করে দ্বীনদার তাবলীগি বিসিএস ক্যাডার পাত্র / তওবা করে বলিউড ছেড়ে দিয়ে আসা নায়িকা আমাদের প্রস্তাব দেয়, কিন্তু তারা তো আমাদের যোগ্য না, আমরা ফিরেও তাকাইনা। আর আপনি কোন নর্দমা/ডোবা থেকে উঠে আসলেন! আচ্ছা, তাও যখন এসেই গেছেন, একটু অনুগ্রহ করি, পাত্র/পাত্রী সম্পর্কে বলেন।

ঐরকম আচরণ বোঝার জন্য অপরপক্ষের খুব জ্ঞানী/সাইকোলজিস্ট/পিএইচডিধারী হওয়ার দরকার নেই, যে কেউই বুঝতে পারার কথা। আস্তে করে কেটে পড়াই উচিত, কেটে পড়েও। আবার সেই দুষ্ট জ্বীনের বদনাম হয়- বিয়ে নাকি আটকে রেখেছে, কোনো তাবীজ/রুকইয়াহ-কারী হুজুরের রিযিক বাড়ে। (এটা তো ভালো বিষয়, তাই না? আরেকজনের রিযিকের ব্যবস্থা! 🙂 )

পরিশেষেঃ আপনি যদি এই লেখাটি পড়ে কষ্ট পেয়ে থাকেন, ক্ষমা করবেন। এমনিতেও সম্ভবত আপনি সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ পড়েই লেখাটি পড়েছেন। আল্লাহ আপনাকে আমাকে সবাইকে হেদায়েত দিক। আমীন।